পাবনার পদকপ্রাপ্ত জ্যোতি বিজ্ঞানী জব্বার মল্লিক
বাংলাদেশে জ্যোতি বিজ্ঞানচর্চার ইতিহাস ও অগ্রগতি পর্যালোচনা করতে গেলে যে নামটি স্মরণ করতে হয় তিনি মোহাম্মদ আবদুল জব্বার মল্লিক। পেশা জীবনের শুরু ও শেষ শিক্ষকতার মধ্য দিয়ে কলকাতার প্রেসিডেন্ট কলেজ ও কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষা জীবন তার পরবর্তী জীবনকে সমানভাবে প্রভাবিত করেছিল। তিনি অত্যন্ত মেধাবী ছাত্র ছিলেন। (১৯৩৮) সালে কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে গণিত বিষয়ে প্রথম শ্রেণীতে প্রথম হয়ে এম.এস.সি ডিগ্রী লাভ করেছিলেন। পর্বতীতে (১৯৩৯) সালে উচ্চ শিক্ষার জন্য বৃত্তি নিয়ে ইংল্যান্ড যাত্রা করেন। উচ্চ শিক্ষা শেষে তিনি চট্টগ্রাম কলেজ, প্রেসিডেন্ট কলেজ, কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়, রাজশাহী সরকারি কলেজ, আহসান উল্লাহ কলেজ/বিশ্ববিদ্যালয়ে অধ্যাপক হিসাবে কর্মরত ছিলেন। অধ্যাপনার পাশাপাশি জ্যোতি বিজ্ঞানচর্চা ও প্রচুর লেখালেখি করেছেন। তার উল্লেখযোগ্য গ্রন্থ (১৯৪৯)সালে বিশ্ব রহস্য নিউটন ও আইনস্টাইন, (১৯৫১) সালে বিশ্ব রহস্য সন্ধানে, (১৯৬৫) সালে খ’গোল পরিচয়, (১৯৬৫) সালে তারা পরিচিতি, (১৯৭৩)সালে প্রাচীন জ্যোতিবিদ্যা, (১৯৮৬) সালে বিশ্ব ও সৌর জগত এই গ্রন্থ গুলো তাঁর সৃষ্টিশীল লেখালেখিতে জীবনে যথেষ্ট জনপ্রিয়তা এনে দেয়। তিনি বিভিন্ন পত্র-পত্রিকায় অগণিত জনপ্রিয় প্রবন্ধ লিখেছেন, এরই স্বকৃত স্বরূপ তিনি (১৯৮৩) সালে বাংলা একাডেমি পুরস্কার ও (১৯৮৫) সালে ২১ পদক লাভ করেন। এ ছাড়া (১৯৯০) সালে বাংলাদেশ অ্যাস্ট্রোনমিক্যাল এসোসিয়েশন তাকে “বুনো পদকে” ভূষিত করেন। জীবিত অবস্থায় (১৯৮৮) সালে আকাশপট প্রকাশ করে মোহাম্মদ আবদুল জব্বার মল্লিক কে কীর্তির প্রতি সম্মান প্রদর্শন করে বাংলাদেশ অ্যাস্ট্রোনমি অ্যাসোসিয়েশন। পেশা জীবনের শেষের দিকে তিনি কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ে গণিত বিভাগের প্রভাষক নিযুক্ত হন। অধ্যাপনা আর লেখালেখির মধ্যেই তার জ্যোতিবিদ্যা চর্চা সীমাবদ্ধ ছিল না। প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয় থাকাকালীন তার সার্বিক তত্ত্বাবধায়ন ও পরিকল্পনায় নির্মিত দেশের প্রথম খ-গোলক, ইঞ্চি ডায়ামিটারে খ-গোলক কমিটিতে মোট ১ হাজার ৯৯০ টি তারার অবস্থান দেখানো হয়েছে। আরো রয়েছে ৮৮ টি নক্ষত্র মন্ডলের সরল রৈখিক চিত্র, এটি তার জীবনের উল্লেখযোগ্য আবিষ্কার হিসেবে বিবেচিত। এই কীর্তিমান মহা পুরুষ পাবনা জেলার সুজানগর উপজেলার গোপালপুর গ্রামে মুন্সী মিয়াজান মল্লিকের ঘরে (১৯১৫) সালে জন্মগ্রহণ করেন। মুন্সী মিয়াজান মল্লিক আর্থিকভাবে সচ্ছল না থাকলেও মেধাবী ছাত্র জব্বারের লেখাপড়া চালিয়ে গেছেন। আর্থিকভাবে অসচ্ছল ও মেধাবী ছাত্র থাকায় স্কুল কর্তৃপক্ষ আব্দুল জব্বারকে বিনা বেতনে লেখা-পড়ার সুযোগ করে দিয়েছিলেন। তিনি সাতবাড়িয়া উচ্চ বিদ্যালয় থেকে ১৯৩২ সালে লেটার সহ ম্যাট্রিক পাস করে বৃওি পান। উল্লেখ্য ছাত্র/ছাত্রীদের মধ্যে তিনিই একমাত্র মুসলিম হিসাবে (১৯৩৪) সালে কলকাতা প্রেসিডেন্সি কলেজ থেকে প্রথম বিভাগে গণিতে লেটারসহ প্রথম স্থান অধিকার করে আইএসসি পাস করেন। অত:পর (১৯৩৭) সালে গণিতে অনার্সসহ বি এস সি পাশ করেন।
No comments